মানুষের খাবার বা আহার কিরূপ হওয়া উচিত

খাবার বা  আহার  কিরূপ হওয়া উচিত  

     
খাবার

                  ছান্দোগ্য উপনিষদে একটি শ্লোক আছে যার দ্বারা মানুষের খাবার বা আহার কিরূপ হওয়া উচিৎ তার বিশেষ সমাধান পাওয়া যায়। 

                  আহারশুদ্ধৌ সত্ত্বশুদ্ধিঃ  সত্ত্বশুদ্ধৌ ধ্রুবা স্মৃতিঃ ।  অর্থাৎ আহার শুদ্ধ  হলে চিত্ত শুদ্ধ  হয়, চিত্ত শুদ্ধ হলে সেই চিত্তে সর্বদা ঈশ্বর বা ভগবান এর স্মৃতি বিরাজিত হয়। ইহা যথার্থ ও যুক্তিপূর্ণ বলিয়া মনে হয়। কারন খাদ্য রস দ্বারা শরীরে পুষ্টি সাধিত হয়। খাদ্য রস যদি উত্তেজক হয় ,কামদায়ক হয় তবে শারীরিক পীড়া দেখা দেয় ও চিত্ত চাঞ্চল্য হয়। সাধন ভজনে বিশেষ করে ভক্তি মার্গে বিশেষ বাধার সৃষ্টি করে।

                   স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন যে ''সুক্ষ্ন শরীর বা মনের সংযম, মাংস পিন্ডময় শরীরের সংযম হইতে উচ্চতর কার্য বটে। কিন্তু সুক্ষ্ন এর সংযম করিতে হইলে অগ্রে স্থুলের সংযম করা বিশেষ আবশ্যক। সুতরাং ইহা যুক্তি সিদ্ধ বোধ হইতেছে যে, খাদ্যাখাদ্যের (খাবার) বিচার মনের স্থিরতারুপ উচ্চবস্থা লাভের জন্য বিশেষ আবশ্যক। নতুবা সহজে এই স্থিরতা লাভ করা যায় না। ''কিন্তু আমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায় এর মধ্যে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। কোনো কোনো সম্প্রদায় এই খাদ্যাখাদ্যের (খাবার) উপর এতো কঠোর বিধি নিষেধ ও বাড়াবাড়ি আরোপ করেছেন যে সাধন ভজন ভক্তি অপেক্ষা আহার এর বিচারের উপর চিত্ত বেশি নিবিষ্ট থাকে। আবার অনেক সম্প্রদায়ের আহারের উপর কোনো বিধি নিষেধ নেই। সেক্ষেত্রে সাধন ভজন অপেক্ষা রসনা তৃপ্তির জন্য চিত্ত বেশি নিবিষ্ট হয়ে থাকে। তাই সাধন ভজন বা ভক্তি দ্বারা ভগবানের কৃপা লাভের জন্য, ভাগবত সত্তা লাভের জন্য, বিশুদ্ধ ও প্রবিত্র আহার নির্বাচন বিশেষ আবশ্যক।

     এই প্রসঙ্গে শ্রীমদ ভাগবত গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ের ৮-১০ নং শ্লোক সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।


  ( আয়ূঃ সত্ত্ববলারোগ্য  সুখপ্রীতিবিবর্ধনা
 উচ্ছিষ্ট সপি চামেধ্যং ভোজনং তামসপ্রিয়ম।

  • যাহা আয়ু, উৎসাহ, বল, আরোগ্য চিত্তপ্রসন্নতা ও রুচি এসকল এর বর্দ্ধনকারী ও সরস স্নেহযুক্ত সারবান ও প্রীতিকর এরূপ আহার সাত্ত্বিকগনের প্রিয়। অর্থাৎ এই ধরনের আহার সাত্ত্বিক আহার, যাহা সাধন, ভজন ও ভক্তি মার্গের পথে বিশেষ উপাযাগী ও উপাদেয়। 
  • অতিকটু, অতিঅম্ল, অতিলবনাক্ত, অতিউষ্ণ , তীক্ষ্ন, বিদাহি এবং দুঃখ শোক, রোগ উৎপাদক আহার রাজস ব্যাক্তিগনের প্রিয় অর্থাৎ এই ধরনের আহার রাজসিক আহার।
  •  আবার যে আহার বহু পূর্বে পাক করা হয়েছে, যাহার রস শুস্ক হইয়াছে, দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, উচ্ছিষ্ট ও অপ্রবিত্র তাহা তামস ব্যাক্তি গণের প্রিয় অর্থাৎ এই ধরনের আহার তামস আহার
                        তাই ভগবৎ সত্তা প্রাপ্তির জন্য ভগবদ উপলব্ধির জন্য  সাত্ত্বিক আহার গ্রহণই বাঞ্জনীয়। সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ কারীর দেহ মনের উৎকার্যতা বাড়ে, ভগবদ শরণ অবিচল হয়। 


                       এখন সাত্ত্বিক আহার কোনগুলি বিচার্য্য বিষয়, প্রথমত শস্যে যা জীব ভগবদ কর্মের দ্বারা ভগবানের সেবার উদ্দেশ্যে  ভগবানের কৃপায় উৎপাদন করে তাহাই সাত্ত্বিক আহার হিসাবে বিবেচিত। প্রকৃতির গর্ভ থেকে অনেক বৃক্ষ সৃষ্টি হয় যা ফুল ফল দান করে।  সেগুলি সাত্ত্বিক আহার হিসাবে গন্য হয় এখন প্রশ্ন হতে পারে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, মাছ, যা যা আমরা নিজেরা চাষ করি, বা প্রতি পালন করি সেগুলি কেন খাদ্য হতে পারেনা ? না পারে না কারণ প্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা যেহেতু আমাদের নেই , প্রাণ নেওয়ার অধিকারও আমাদের নেই এই সকল ভগবানের সৃষ্ট প্রাণী। মানুষের মতো ওদেরও প্রাণ ভগবানের দান। এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, ডিম্ ইত্যাদি হলো উত্তেজক বস্তূ যা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে দেহ মনের বিকার সৃষ্টি হয়। তাই ওই ধরনের আহার সাত্ত্বিক আহারের মধ্যে পড়ে না। রাজসিক বা তামসিক আহারের মধ্যে গন্য হয়। জীব জগতে শাকাহারী , মাংসাহারী ও সর্বভুক প্রাণী যদি তুলনা করা হয় দেখা যাবে শাকাহারী প্রাণীদের শরীরে বিষ নেই। তারা শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির পক্ষান্তরে মাংসাহারী ও সর্বভুক প্রাণীদের শরীরে বিষ আছে ও এরা উগ্র প্রকৃতির ও হিংস্র। এটা আহার গুনের প্রভাব। 

                          অনেকে বলেন মাংসাহারীদের ক্ষমতা বেশি কিন্তু বাঘ আর ঘোড়ার তুলনা করলে দেখা যাবে ঘোড়ার ক্ষমতা বেশি , আবার হাতি ও সিংহর তুলনায় হাতির ক্ষমতা অনেক বেশি। ছোলা ,মটর,দুধ ,ঘি দই , মাখন ইত্যাদি মাছ ,মাংস এর তুলনায় খাদ্য হিসাবে অনেক বেশি উপাদেয় ও নিরাপদ ও নিরোগ আহার। মানুষ শুধু রসনা তৃপ্তির জন্যই মাছ- মাংসের দিকে ঝুকে থাকে। বিশ্ব এর বিখ্যাত বিখ্যাত নিউট্রিশিয়ানরা এখন শাক সবজি নিরামিষ আহারের কথাই বলছেন। আমেরিকা ,রাশিয়া জার্মান বিজ্ঞানীরা প্রমান করে দেখিয়েছেন যে নিরামিষী মানুষরা মাংসাসী মানুষের তুলনায় বেশি দিন নিরোগ শরীরে সুস্থ দেহে বেঁচে থাকতে পারে। এ থাকে বোঝা যায় যে প্রাচীন ভারতীয় মুনি ঋষিরা কতখানি বিজ্ঞানমনস্ক ও দুরদর্শী ছিলেন। 

                             সনাতন হিন্দুধৰ্মবলাম্বীদের তথা সমগ্র মানব জাতির মঙ্গল এর জন্য রোগ শোক থেকে মুক্ত থাকার জন্য দীর্ঘায়ু প্রাপ্তির জন্য দেহ মনের বিশুদ্ধতা ও উৎকর্ষতার জন্য সর্বোপরি ভগবানের শরণা গতি প্রাপ্তির জন্যে সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করে জীবন যাপন করি.

     হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণকৃষ্ণ হরেহরে 
   হরেরাম হরেরাম রামরাম হরেহরে 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ